নিউজ ডেস্ক:
বিক্ষোভ দমনে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনের নামে নিরাপত্তা বাহিনীকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ওই সময়ে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১৩ শতাংশ শিশু ছিল। এ ছাড়া, ১১,৭০০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী গণহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের মাধ্যমে বিরোধীদের দমন করে।
ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরের দিন শেখ হাসিনা স্বয়ং নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন বিক্ষোভকারীদের হত্যা করে লাশ গুম করতে। তিনি বলেন, "বিক্ষোভের নেতাদের ধরুন, হত্যা করুন এবং তাদের লাশ গুম করুন।"
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে নিহতদের ৬৬ শতাংশ গুলিতে মারা গিয়েছেন, যেখানে ধাতব গুলি ভর্তি শটগান ব্যবহার করা হয়েছিল। এসব অস্ত্র সাধারণত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।
এছাড়া, নারী শিক্ষার্থীরা ব্যাপক যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকির শিকার হয়েছেন। শিশুদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে ধানমন্ডিতে ১২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী ২০০টি ধাতব গুলি ছোঁড়ার ফলে মারা যান।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে একটি তদন্ত শুরু করেছে। বর্তমানে তিনি ভারতে নির্বাসিত রয়েছেন, এবং তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও রাজনৈতিক বন্দিত্বের অভিযোগে মামলা চলছে।
বাংলাদেশের একটি আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক এই ঘটনার কঠোর নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণগ্রেফতার, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথ বেছে নিয়েছিল। এই ঘটনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ সরকারের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে, এবং বিশ্ব নেতারা দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।